লেতা সেমোয়া — মাহবুবুর রহমান
বাংলাদেশে প্রকাশমান বইয়ের ধারায় 'লেতা সেমোয়া' গ্রন্থ হিসেবে বেশ ব্যতিক্রমী, সাথে সাথে গুরুত্বপূর্ণ ও বটে। 'লেতা সেমোয়া' ঠিক কোন জনরায় পড়ে তা বলা মুশকিল। একই সাথে গ্রন্থটি ফরাসি দেশ বিষয়ক প্রবন্ধসাহিত্য, ভ্রমণকাহিনী, ইতিহাস, শিল্পকলা পরিচিতি-সমালোচনা, রাজনৈতিক ভাষ্য, পপ-কালচার রেফারেন্স ইত্যাদির মিশেলে বাংলায় অভূতপূর্ব এক কাজ।
শিল্প-সভ্যতার ইতিহাসে ফরাসি মুলুকের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। 'এস্থেটিক' চর্চা করা যে কোন মানুষের পরম আগ্রহের বিষয় ফ্রান্স। যে কোন বাঙালি পাঠকের ফরাসি মুলুকের সামগ্রিক সুলুকসন্ধানের প্রথম ধাপ হতে পারে উক্ত গ্রন্থ। একখণ্ড ফ্রান্স পাঠকের টেবিলে সযত্নে তুলে আনার চেষ্টা করেছেন বইটির লেখক মাহবুবুর রহমান। তিনি তাঁর সমস্ত জ্ঞান-অভিজ্ঞান উক্ত বইতে মেলে ধরেছেন। ফরাসি দেশ নিয়ে লেখকের পঠনপাঠনের পরিধি বিশাল ও বিস্ময়কর। এমন হেন বিষয় নেই যা নিয়ে তিনি আলাপ উত্থাপন করেন নি।
মাহবুবুর রহমানের গদ্য বেশ সুপাঠ্য। পাঠককে নন-ফিকশন বই পড়িয়ে শেষ করতে পারাটা কঠিন কাজ। সেই কাজে লেখককে মোটামুটি সফল বলা যায়। বাংলা বইয়ের তুলনায় বইয়ের প্রোডাকশন কোয়ালিটি টপ নচ। বইতে প্রচুর রঙিন চিত্র রয়েছে। কেউ যদি বইটি না পড়ে শুধু দেখার উদ্দেশ্য কিনেন তাতেই পয়সা উসুল হয়ে যাবে তার।
এতসব প্রশংসার পরেও বইটির কিছু খামতির কথা না বললেই নয়। বইটি ঠিক সাধারণ পাঠকের মনঃপুত হবার নয়। কারন মাহবুবুর রহমানের গদ্য সুপাঠ্য হলেও তাতে হিউমারের অভাব রয়েছে ফলে একটানা পড়তে থাকলে খানিকটা বিরক্তি আসাটা স্বাভাবিক। তাই একদিনে বইয়ের একটা করে চ্যাপ্টার পড়া ভালো। ফিকশনের মতো একাধারে আসলে নন-ফিকশন বই পড়াও যায় না।
তাছাড়া লেখক ধরেই নিয়েছেন যে পাঠক ফরাসি দেশের যে কোন আলোচনাদি শুনতে আগ্রহী। তিনি আভ্যন্তরীণ এমনসব ইতিহাসদি নিয়ে লম্বা আলোচনা করেছেন যা আম পাঠকের রিলেভেন্সি ধরে রাখতে অক্ষম। বইটি আসলে কালেক্টর'স পিস হিসেবে অত্যন্ত যুতসই। এরকম আরো গ্রন্থাদি বাংলায় লেখা জরুরী। সম্ভবত মাহবুবুর রইমান ই হয়তো লিখবেন ভবিষ্যতে।
বইটি বাতিঘর, পাঠক সমাবেশ, দ্য রিডিং ক্যাফে এবং রকমারি থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। ওপার বাংলার কেউ সংগ্রহ করতে চাইলে আমাকে জানায়েন।
Post Comment
কোন মন্তব্য নেই