ads

Breaking News

হ্যাটট্রিকের সামনে দাঁড়িয়েও মেসির পেনাল্টি না নেওয়ার কারণ
মাইক্রোসফট কি টিকটককে কিনে নিচ্ছে?
Ugh PBR&B kale chips Echo Park.
মাইক্রোসফট কি টিকটককে কিনে নিচ্ছে?.
Authentic bitters seitan pug single-origin coffee whatever.
মাইক্রোসফট কি টিকটককে কিনে নিচ্ছে?
Vice mlkshk crucifix beard chillwave meditation hoodie asymmetrical Helvetica.
Ugh PBR&B kale chips Echo Park.
Gluten-free mumblecore chambray mixtape food truck.
Authentic bitters seitan pug single-origin coffee whatever.

আপনি কেন ব্রাজিলকে (ফুটবল খেলায়) সমর্থন করেন?

 



ফুটবল, বিশেষত বিশ্বকাপ ফুটবলের সাথে আমার খানিক পরিচয় ১৯৯৮ সালে। তখন আমার বয়স ৮বছরের মত। যেই গ্রামে আমার জন্ম সেখানে এখনো বিদ্যুতের আলো পৌঁছায়নি, ১৯৯৮ সালেতো প্রশ্নই আসেনা। তারপরেও বিশ্বকাপের ঝাঁজ কিভাবে কিভাবে যেন সেখানে পৌঁছে গিয়েছিল। তখনই প্রথম ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স ইত্যাদি দেশের নাম শুনলাম। ফুটবল বলতে তখনো কিছুই বুঝিনা, কিন্তু কিভাবে যেন জেনেছিলাম ফাইনালে ব্রাজিল হেরে গেছে।

গ্রাম থেকে পরিবারের সাথে ১৯৯৯ সালে ঢাকা শহরে স্থানান্তরিত হলাম। তারপর আমার সাথে পরিচয় ঘটল টেলিভিশন, দৈনিক পত্রিকা ইত্যাদির সাথে। সময়ের কাটা ঘুড়ে ২০০১/০২ সালের দিকে চলে এল। ব্রাজিল তখন বাছাই পর্বে রীতিমতো ধুঁকছে, বিশ্বকাপ খেলতে পারবে কি না তা নিয়ে মাঝে মাঝেই পত্রিকায় রিপোর্ট হচ্ছে। শেষপর্যন্ত ধুঁকে ধুঁকেই ব্রাজিল পৌঁছে গেল বিশ্বকাপের মূলপর্বে।

জানিয়ে রাখা ভাল, ফুটবলের দর্শক হওয়ার আগে আমি ফুটবল তথা বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসের একনিষ্ঠ পাঠক। ২০০২ বিশ্বকাপের আগেই আমার ১৯৩০ হতে প্রতিটি বিশ্বকাপের ইতিহাস নখদর্পনে। ১৯৩৮ বিশ্বকাপে কোচের অতি আত্মবিশ্বাসের দরুন তখনকার ব্রাজিল দলের সেরা খেলোয়াড় লিওনিডাস দ্যা সিলভাকে সেমিফাইনালে বসিয়ে রেখে বাদ পরার ইতিহাস আমার জানা।

ছবি: লিওনিদাস দ্যা সিলভা: তার সম্পর্কে ৫০ দশকের একজন ব্রাজিলিয়ান ফুটবল বিশারদ বলেছিলেন, পেলে যদি সোনার টুকরা হয় তাহলে লিওনিদাস ছিলেন হীরকখণ্ড।

এরপর জানলাম ১৯৫০ সালের মারাকানজো ট্র‍্যাজেডি সম্পর্কে। লিগভিত্তিক সেবারের টুর্নামেন্টের শেষ ম্যাচে ড্র করলেই চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল, অথচ মারাকানার সেই ম্যাচে উরুগুয়ের সাথে হেরে যায় স্বাগতিক ব্রাজিল।

১৯৫৪র বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বলার মত কিছু নাই, ফাইনালে হেরে গেলেও সেবারের বিশ্বকাপটা আসলে ছিল দ্যা ম্যাজিকাল ম্যাগিয়ার্সদের।

এল ১৯৫৮র বিশ্বকাপ, ১৭ বছরের এক বিস্ময়বালকের বীরত্বে ভর করে প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল।

চিত্র: ১৭ বছরের বিস্ময়বালক পেলে এবং ব্রাজিলের প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ ফুটবল জয়।

১৯৬২তে ব্রাজিল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন, পেলে ততদিনে ফুটবলবিশ্বের বড় তারকা। অথচ টুর্নামেন্টের শুরুতেই তিনি কিনা ইঞ্জুরির থাবায় বিদায় নিলেন। পেলে বিদায় নিলেন, কিন্তু তখনো একজন ছিলেন; গারিঞ্চা, দ্যা লিটল বার্ড। গারিঞ্চার কাঁধে চড়ে সেবারও চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। সাথে অবশ্য যোগ্য সহচার্য দিয়েছিলেন দালমা সান্তোস, নিল্টন সান্তোস (সর্বকালের সেরা ফুলব্যাকের তালিকায় এখনো এই দুইজনের নাম আসে), দিদি, ভাভা, আমারিলদো প্রমুখ।

চিত্র: গারিঞ্চা (নোট: পেলে এবং গারিঞ্চা একসাথে খেলা ম্যাচে ব্রাজিল কখনোই হারেনি।)

চিত্র: ১৯৬২র বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিল দল।

১৯৬৬র বিশ্বকাপের শুরুতেই প্রতিপক্ষের বারংবার ফাউলের শিকার হয়ে ইঞ্জুরিতে আক্রান্ত হন পেলে, সেই সাথে সেবার ব্রাজিলও শুরুতেই বিদায় নেয়।

তারপর এল ১৯৭০, মাঠে দেখা গেল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবল দলকে। পেলের সাথে সেবার ছিলেন জেয়ারজিনহো, টোস্টাও, রিভেলিনো, কার্লোস আলবার্তো, ক্লোদোয়ালদো, গার্সন প্রমুখ। ব্রাজিল সেবার ৩য় বারের মত চ্যাম্পিয়ন হয়, চিরদিনের মত করে নিজের করে নেয় জজুলেরিমে কাপ (তৎকালে বিশ্বকাপ এই নামেই পরিচিত ছিল, কথা ছিল কেউ ৩বার চ্যাম্পিয়ন হলে এই কাপ চিরদিনের মত তাদের হয়ে যাবে।)

চিত্র: ১৯৭০ বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিল দল

চিত্র: ১৯৭০ বিশ্বকাপের ফাইনালে ইতালির বিপক্ষে পেলের পাস হতে ব্রাজিল অধিনায়ক কার্লোস আলবার্তো তরেসের এই গোলটা বিশ্বকাপের ইতিহাসের সেরা দলীয় গোল হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

১৯৭৪য়ের বিশ্বকাপে পেলে ছিলেন না, রিভেলিনো থাকলেও তেমন কিছু করতে পারেননি। সেবারের বিশ্বকাপটা মূলত ছিল ডাচদের টোটাল ফুটবল আর ইয়োহান ক্রুয়েফের; যদিও '৫৪র হাঙ্গেরির মত তাদেরও ফাইনালে পরাজয় ঘটে জার্মান মেশিনের সামনে।

১৯৭৮ আর ১৯৮৬ বিশ্বকাপ ছিল আর্জেন্টিনার, ১৯৯০ ইতালির। মাঝে ১৯৮২তে আসে জিকো, সক্রেটিস, এডার, ফ্যালকাও, জুনিয়রদের দুরন্ত ব্রাজিল। যদিও সেবারের সেমিফাইনালে একজন পাওলো রসির ইতালির কাছে হেরে বিদায় নেয় ব্রাজিল। টেলে সান্তানার সেই ব্রাজিল দলটা সেবারে বিশ্বকাপ ছাড়া আর সবকিছুই করেছিল, ইতালির কাছে হারকে পরবর্তীতে জিকো বর্ণনা করেছিলেন, ‘যেই রাতে ফুটবলের মৃত্যু হয়…'। পুসকাসদের হাঙ্গেরি আর ক্রুয়েফের হল্যান্ডের সাথে ব্রাজিলের এই দলটাকে বর্ণনা করা হয় বিশ্বকাপ না জেতা শ্রেষ্ঠ দল হিসাবে।

চিত্র: ১৯৮২র ব্রাজিল দল, মানুষের ভালবাসা ছাড়া যেই দলটা আসলে কিছুই জিতেনি।

২৪ বছরের খড়া কাটিয়ে ব্রাজিল আবার চ্যাম্পিয়ন হয় ১৯৯৪সালে, রোমারিও-বেবেতো-দুঙ্গার হাতে ধরে।

চিত্র: ১৯৯৪র বিশ্বকাপ জয়ী ব্রাজিল দল

১৯৯৪ সালের বিশ্বজয়ী ব্রাজিল দলে আরও অনেকের সাথেই ছিলেন সদ্য কৈশোরোত্তীর্ণ একটা ছেলে, নাম রোনালদো লুইস নাজারিও দ্যা লিমা। স্কোয়াডে থাকলেও সেবারে কোন ম্যাচেই মাঠে নামা হয়নি তার। ১৯৯৮র বিশ্বকাপ নাগাদ সে অবশ্য বড় তারকা, বিশ্বকাপটাও মাতিয়ে তুলেছিলেন তিনি। পেয়েছিলেন সেবারের সেরা খেলোয়াড়ের তকমা, ‘গোল্ডেন বল’। অথচ ফাইনালের সময় এক রহস্যময় অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে মাঠে থেকেও যেন ছিলেন অনুপস্থিত। স্বাগতিক ফ্রান্সের কাছে হেরে রানার্সআপ হয় সেলকাওরা।

এরপর এল ২০০২য়ের বিশ্বকাপ, আমার সেবারই প্রথম ফুটবল দেখা শুরু হয়। আমি মনোযোগী পাঠক ছিলাম, বিশ্বকাপের আগেই এতদিনের ইতিহাস আমার মুখস্থ। সম্ভবত ইতিহাস আর ঐতিহ্যের কারনেই ব্রাজিলের প্রতি একটা বাড়তি টান বা ভালবাসা তৈরী হয়ে গিয়েছিল। প্রায় ৩/৪ বছর ধরে ইঞ্জুরিজর্জর রোনালদো তখন দলে ফিরেছেন, সাথে ছিলেন রিভালদো, রোনালদিনহো, রবার্তো কার্লোস, কাফু আর লুসিওরা। কোচ তখন বিগফিল খ্যাত লুইস ফিলিপ স্কোলারি। শুরু থেকে শেষপর্সন্ত সবম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন হয় ব্রাজিল, ৮গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন রোনালদো।

চিত্র: রোনালদো- দ্যা ফেনোমেনন।

চিত্র: রিভালদো

চিত্র: রোনালদিনহো

চিত্র: কাফু ও কার্লোস

চিত্র: সোনার ট্রফিতে চুমু, ব্রাজিল ২০০২।

ফুটবল বিশ্বকাপে ব্রাজিল দলের সেই সর্বশেষ সুখস্মৃতি। ২০০৬ বিশ্বকাপে একজন জিদান একাই প্রায় ব্রাজিলকে হারিয়ে দেন। ২০১০য়ের কাকা-ফ্যাবিয়ানোর দলটা ছিল মোটামুটি, কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে একজন ফেলিপ মেলোর মাথাগরম করে লালকার্ড আর অধিক নার্ভানেসের কাছে হেরে যায় ব্রাজিল। ২০১৪র ব্রাজিল দলটা ছিল মিডিওকোর, সাথে যোগ হয় জার্মানির কাছে সাত গোল খাওয়ার লজ্জা। ২০১৮তেও ব্রাজিল ছিল মিডিওকোর, আরেকটা মিডিওকোর দল বেলজিয়ামের কাছে হেরে বিদায় নেয় কোয়ার্টারে।

প্রশ্ন ছিল আমি কেন ব্রাজিল ফুটবল দলের সমর্থক। উত্তর খুব সহজ, ব্রাজিলের ফুটবলীয় ইতিহাস আর প্রথমবার খেলা দেখার অনুভূতি, এই দুই কারনেই আমি ব্রাজিল দলের সমর্থক। এই সমর্থন আসলে সুখস্মৃতির চেয়ে কষ্টই বেশি দিয়েছে। ২০১০য়ে ছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, হলের রুমে আমি ছাড়া আর সবাই আর্জেন্টাইন সাপোর্টার। ব্রাজিল ডাচদের কাছে হেরে বাদ পরার পর আমার চারপাশে ঘিড়ে রুমমেটদের উল্লাস খুব ভালমতই মনে আছে। ২০১৪তে ছিল সাতগোল খাওয়ার লজ্জা। কনফেডারেশন কাপ আর কোপা আমেরিকা কয়েকবার জিতেছে বটে, কিন্তু এগুলো নিয়ে কখনোই খুব একটা উল্লাস কাজ করেনাই।

আরেকটা কথা, ২০১০ বা এর পরে যদি আমি খেলা দেখা শুরু করতাম, তাহলে সম্ভবত আমি জার্মানি বা স্পেনের সমর্থক হতাম। অথবা মেসির কারনে আর্জেন্টিনার সমর্থকও হতে পারতাম। গত ১০/১২ বছরের যে মিডিওকোর ব্রাজিল দল দেখা যাচ্ছে, প্রথমবার খেলা দেখে তাদের সমর্থন করা কারো জন্যই সহজ হবে বলে মনে হচ্ছেনা। সম্ভবত শৈশবের ভালবাসার জন্যই আজও এই দলটার সমর্থন করে যাচ্ছি।

চিত্র: সর্বশেষ কোপা আমেরিকা জয়ী ব্রাজিল দল, নেইমারকে যোগ করলে এটাই হবে ব্রাজিলের বর্তমান জাতীয় দল।

নোট: স্মৃতি থেকেই লেখা, কিছু তথ্য এদিক-সেদিক হতে পারে। ছবির সূত্র ইন্টারনেট।

কোন মন্তব্য নেই