বিশ্বকাপ ফুটবল আর ঈদ আনন্দ।
বিশ্বকাপ ফুটবল আর ঈদ। দুটো উদ্যাপনের সময় মিলে যাওয়ায় দুই বন্ধুর ঈদ পরিকল্পনায় এবার যোগ হয়েছে বাড়তি কিছু। এবার ঈদে তাঁরা বাড়ি গিয়ে ফুটবল খেলার পরিকল্পনা করেছেন। ট্রেনে ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিন আজ সোমবার কমলাপুর রেলস্টেশনে দেখা হয় এই দুই বন্ধুর সঙ্গে।
কমলাপুর স্টেশনের ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে কথা হয় দুই বন্ধুর একজন আলিফুর রহমানের সঙ্গে। গায়ের জার্সি জানান দিচ্ছিল তিনি আর্জেন্টিনার সমর্থক। আলিফুর জানান, দুজনেই ট্রেনে করে বগুড়ায় গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন। দুজনেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোচিং করছেন ঢাকায়। দুজনেরই ফুটবল প্রিয় খেলা। তিনি বললেন, ‘কোচিং শেষে ঢাকায় থেকে কী করব। বাড়িতে গিয়ে ফুটবল খেলা দেখব। মাঠে গিয়ে খেলব আর হইহুল্লোড় করব। এ জন্য আগেভাগেই ঢাকা ছাড়ছি।’
স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ ট্রেন নির্ধারিত সময়েই প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে যাচ্ছে। ভোর থেকে স্টেশনে ঘরমুখী মানুষের ভিড় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে।
একই মাদ্রাসার ছয় শিক্ষার্থী অপেক্ষা করছেন স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে। তাঁদের ট্রেন ময়মনসিংহগামী অগ্নিবীণা আসবে ৯টা ৪৫ মিনিটে। তবে যানজটের আশঙ্কায় তাঁরা আগেভাগেই চলে এসেছেন স্টেশনে। ঢাকার আদাবরের বায়তুল আমান মাদ্রাসা থেকে ঈদের ছুটি পেয়ে তাঁরা সকাল সাতটায় চলে আসেন স্টেশনে। এই দলের সবচেয়ে ছোট সদস্য ১১ বছর বয়সী রমজান আলী। ঈদের আনন্দ যে তারই বেশি, তা কথা শুনেই বোঝা গেলে। ময়মনসিংহের আঞ্চলিক টানে বলল, ‘বাড়ি যাইয়া মায়ের হাতে সেমাই খাইয়াম। খেলা করাম।’
গতকাল রোববারের তুলনায় আজ স্টেশনে মানুষের ভিড় বেশি দেখা গেছে। ঢাকার বালুঘাট উচ্চবিদ্যালয়ের এক শিক্ষক তাঁর পরিবার নিয়ে ঈদ করতে জামালপুরের সরিষাবাড়ী যাচ্ছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্কুল ছুটি দিয়েছে, তাই ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছি। জামালপুর যেতে বাস সার্ভিসও খুব একটা ভালো না। আরামে যাওয়ার জন্যই ট্রেন বেছে নেওয়া। ঈদে বাড়ির সবার সঙ্গে আনন্দে সময় কাটাব।’
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, আজ সারা দিনে দেশের বিভিন্ন পথে ৬৬টি ট্রেন ছেড়ে যাবে। ভোর থেকে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কমলাপুর থেকে দেশের বিভিন্ন পথে ২৩টি ট্রেন ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে ৪টি ট্রেন দেরি করে স্টেশন ছেড়ে গেছে। সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও তা ৩০ মিনিট দেরি করে ছেড়েছে। কিশোরগঞ্জগামী এগারসিন্ধু এক্সপ্রেস ৭টা ১৫ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও তা ৩৫ মিনিট দেরি করে। তারাকান্দিগামী অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ৪০ মিনিট দেরি করে স্টেশন ছাড়ে।
চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস সকাল আটটায় ছাড়ার কথা থাকলেও স্টেশন ছাড়ে ৪০ মিনিট দেরিতে—৮টা ৪০ মিনিটে। নীলসাগর এক্সপ্রেসের যাত্রী রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দেশে আধা ঘণ্টা, এক ঘণ্টা এগুলো কোনো দেরি না। বাসে গেলে তো ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় বসে থাকতে হয়। এর চেয়ে ট্রেনই ভালো।’
যাত্রার আগে টিকিট কেনা নিয়ে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ করলেন দিনাজপুরগামী একতা এক্সপ্রেসের যাত্রী মাসুদ হেলাল। তিনি ফার্মগেটের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। পাঁচ বন্ধু মিলে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন। তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগে টিকিট কিনতে এসে। টিকিটে পাওয়া যায় না, আবার কালোবাজারে পাওয়া যায়। সরকার চাইলেই এই অব্যবস্থাপনা বন্ধ করতে পারে।
কমলাপুর স্টেশনের ব্যবস্থাপক সিতাংশু চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিনে স্টেশনে অত বেশি ভিড় নেই। এর কারণ যাত্রীরা স্টেশনে এসেই ট্রেন পাচ্ছেন। লোকজন চলে যাচ্ছেন। এভাবে চললে যাত্রীদের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হবে এবং তাঁরা নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১৩ জুন থেকে ঈদ উপলক্ষে নয় জোড়া ট্রেন ছেড়ে যাবে স্টেশন থেকে। ঢাকা-পার্বতীপুর-ঢাকা, ঢাকা দেওয়ানঞ্জ-ঢাকা, ঢাকা-রাজশাহী-ঢাকা, ঢাকা-খুলনা-ঢাকা, ঢাকা-লালমনিরহাট-ঢাকা পথে এই বিশেষ ট্রেন চলবে। ঈদের পরের দিন থেকে সাত দিন পর্যন্ত এ ব্যবস্থা থাকছে। এ ছাড়া ঈদের দিন ভৈরব-কিশোরগঞ্জ পথে এক জোড়া ও ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ পথে এক জোড়া করে বিশেষ ট্রেন চলবে।
চারটি ট্রেনের দেরি প্রসঙ্গে সিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘৬৬টি ট্রেনের মধ্যে দু-একটি ট্রেন ২০ থেকে ৩০ মিনিট দেরি করছে, এটাকে শিডিউল বিপর্যয় বলা যায় না। এটা অস্বাভাবিক কিছু না। আশা করি, খুব একটা সমস্যা হবে না।’ ট্রেনের ছাদে, বাম্পারে ঝুঁকি নিয়ে কাউকে ভ্রমণ না করার অনুরোধ জানান তিনি।
কোন মন্তব্য নেই