সহজকে কঠিন করা জয় লিভারপুলের
®চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে প্রথম লেগে রোমার বিপক্ষে ৫-২ গোলে জয় পেয়েছে লিভারপুল।
®সালাহ ও ফিরমিনহো দুটি করে গোল করেন।
®জেকো ও পেরোট্টি রোমার পক্ষে একটি করে গোল করেন।
লিভারপুল সভাপতি জন ডব্লু হেনরির নিশ্চয়ই পুরো বিষয়টা অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল। রোমা থেকে গত জুনেই ৪৩ মিলিয়ন ইউরোয় মিসরের মোহাম্মদ সালাহকে দলে নিয়েছিলেন। সে সময় ভাবছিলেন মিসরীয় এক ফুটবলারের জন্য ৪৩ মিলিয়ন একটু বেশি হয়ে গেল কিনা! কিন্তু গোটা মৌসুমে সালাহ যে ধরনের ফুটবল খেলছেন, তাতে নিশ্চয়ই নিজেকে ভাগ্যবান ভাবছিলেন। আজ রোমার বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের প্রথম লেগের পর এমন ধারণা বদ্ধমূল হতে বাধ্য যে সাম্প্রতিক সময়ের সেরা বাণিজ্যটা লিভারপুল এই সালাহকে কিনেই করেছে। অবিশ্বাস্য এক ফুটবলার তিনি। এক মৌসুমে ৪৩টি গোল করেছেন-যার দুটি আজ। সালাহ আর ফিরমিনহোর জোড়া গোলের সঙ্গে সাদিও মানের গোল-রোমাকে প্রায় উড়িয়ে দিয়েই সেমির প্রথম লেগটা সেরেছে লিভারপুল।
৮০ মিনিট পর্যন্ত ৫-০ গোলে এগিয়ে থাকা ম্যাচে নাটুকেপনাও কম সইতে হয়নি লিভারপুলকে। ৮১ মিনিটে জেকো আর ৮৫ মিনিটে ডিয়েগো পরেট্টির পেনাল্টি থেকে করা দুটি গোল অ্যানফিল্ডের দর্শকদের আত্মা প্রায় খাঁচাছাড়া হওয়ারই উপক্রম হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা ৫-২ গোলে জিতে ফাইনালের পথে নিজেদের দারুণভাবেই নিয়ে গেছে ক্লপের দল। শেষের দিকে দুটি গোল করে রোমের দ্বিতীয় লেগটাও জমিয়ে তোলার প্রতিশ্রুতিটা কিন্তু ফুটবল-রোমান্টিকদের ভালোভাবেই দিয়ে গেছে রোমা।
ম্যাচের প্রথম ত্রিশ মিনিট কিন্তু ছিল রোমার দখলেই। বেশ কয়েকটি আক্রমণও তারা করেছে। কিন্তু ৩৬ মিনিটে মোহাম্মদ সালাহ দুর্দান্ত এক শটে লিভারপুলকে এগিয়ে দেন। গোল পেয়ে ম্যাচটাও নিজেদের দখলে নিয়ে নেয় অ্যানফিল্ডের সেনারা। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ফিরমিনহোর পাস থেকে বল পেয়ে ঠান্ডা মাথায় জালে জড়িয়ে লিভারপুলকে ২-০ গোল এগিয়ে নেন সালাহ। এটি ছিল চ্যাম্পিয়নস লিগে সালাহর দশ নম্বর গোল। আর কোনো লিভারপুল ফুটবলারেরই যে ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় দশ গোলের রেকর্ড নেই।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই রোমাকে ছন্নছাড়া মনে হচ্ছিল। ইতালীয় ক্লাবটির দুর্বলতার পুরো সুযোগই এ সময় নিয়েছে লিভারপুল। অফসাইডের ফাঁদ এড়িয়ে মাঠের ডান দিক দিয়ে বল ধরে নিয়ে বক্সের কাছাকাছি পৌঁছে সালাহ যে ক্রসটি করেন, ৫৬ মিনিট সেটি থেকেই লিভারপুলের তৃতীয় গোলটি করেন সাদিও মানে। ৬১ ও ৬৯ মিনিট; ফিরমিনহো পরপর দুটি গোল করে বুঝিয়ে দেন তিনিও কম যান না।
৮০ মিনিট ৫-০ গোলে এগিয়ে থাকা ম্যাচটাই কিছুটা জটিলতার মধ্যে নিয়ে ফেলে লিভারপুল। এ জন্য তাদের রক্ষণের দুর্বলতাকে দায়ী করা যেতেই পারে। ৮১ মিনিটে রাদজা নাইনগোলানের লম্বা পাস দুজন লিভারপুল ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে পৌঁছে যায় জেকোর কাছে। বুক দিয়ে বল নামিয়ে লিভারপুল গোলরক্ষককে অসহায় বানান জেকো।
৮৫ মিনিটে পেনাল্টি পায় রোমা। জেমস মিলনার বোকার মতো নাইনগোলানের একটি শট বক্সের মধ্যে হাত দিয়ে ফেরান। পেনাল্টি থেকে ব্যবধান কমান পেরোট্টি। শেষের পাঁচ মিনিট লিভারপুলের সমর্থকদের কাছে মনে হয়েছে অনন্তকাল। এই সময় রোমা সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল লিভারপুলের রক্ষণের ওপর। বেশ কয়েকটি সুযোগও তৈরি হয়েছিল। মনে হচ্ছিল বার্সেলোনার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের সেই বীরত্বপূর্ণ ম্যাচের পুনরাবৃত্তি তারা ঘটাতে পারবে কিনা। অসম্ভবের পেছনে ছুটেও শেষ পাঁচ মিনিটে লিভারপুলকে কিন্তু বড় ধরনের একটা বার্তা রোমা দিয়েই গেল। রোমের দ্বিতীয় লেগটা কিন্তু মোটেও সহজ হবে না ক্লপ-বাহিনীর জন্য।
কোন মন্তব্য নেই